ভোলায় সংঘর্ষের নেপথ্যে দেশ অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত
ভোলা প্রতিনিধিদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালিয়েছিল একটি গ্রুপ। তারাই ভোলার বোরহানউদ্দিনে ফেসবুক হ্যাকিং ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ইস্যুতে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের তদন্তে এমন অনেক বিষয় উঠে এসেছে। তদন্তশেষে পুলিশ সদর দফতরে রোববার প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। ২৫০ পৃষ্ঠার ফাইলে ১১৫ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদনে হামলাকারীদের নানা তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। সাত দিনের তদন্তকালে প্রত্যক্ষদর্শী ১০৯ জনের বক্তব্য রেকর্ড করা হয় বলে তদন্ত কমিটির এক সদস্য সূত্রে জানা গেছে। তদন্ত কমিটির সদস্য পুলিশ সদর দফতরের এসবির এসপি হাসিবুল আলম শামিম ও ভোলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর সাফীন মাহামুদ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। শুক্রবার তদন্ত কাজ শেষ হয়। শনিবার তদন্ত কমিটির প্রধান বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মো. সফিকুল ইসলাম ওই রিপোর্ট নিয়ে ঢাকায় যান। তবে টিম প্রধান ডিআইজি মো. সফিকুল ইসলাম দেশের বাইরে থাকায় সোমবার রিপোর্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিপ্লব চন্দ্র শুভ নামের এক যুবকের ফেসবুক হ্যাক করে তাতে ধর্মীয় কটূক্তি করাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। যারা হ্যাকিং করে শুভর কাছে টাকা দাবি করেছিল, পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এমনকি শনিবার রাতে বোরহানউদ্দিন থানায় জেলা প্রশাসন ও বোরহানউদ্দিনের শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব মাটামারার পীর সাহেবসহ আলেম সমাজের বেশ কয়েকজনের উপস্থিতিতে ওই ইস্যুতে বৈঠককালে গ্রেফতারকৃতদের হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য মামলা করা হয় বলেও জানানো হয়। ওই বৈঠকের পর পরের দিনের সমাবেশ স্থগিত করা হয়। কিন্তু তার পরও পরের দিন বোরহানউদ্দিন ঈদগাহ মাঠে সমাবেশ হয়েছে। ওই সমাবেশও সকাল সাড়ে ১০টায় শেষ হয়। কিন্তু তারপর বেলা ১১টার পর তৌহিদি জনতার ব্যানারে একটি গ্রুপ হামলা শুরু করে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ওই সময় ৪ জন নিহত হয়। পুলিশসহ আহত হয় অর্ধশতাধিক। হামলাকারীরা পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি, পুলিশ সুপার, ইউএনওসহ কর্মকর্তাদের হত্যা করতে মারমুখী হামলা করে। প্রতিবেদনে এসব বিষয় উঠে আসে। কারা হামলা করেছে, এমন বেশ কিছু হামলাকারীর তথ্য সংযুক্ত হয়েছে প্রতিবেদনে। এদিকে হামলার নেপথ্যে থাকা দু’একজনের বিষয়ও নিশ্চিত হয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। যারা হামলাকারীদের অর্থের জোগান দিয়েছিলেন। সরাসরি সংঘর্ষে যুক্ত থাকার পাশপাশি সাধারণ মুসল্লিদের উত্তেজিত করার নেতৃত্বে ছিলেন ৩০ থেকে ৪০ জন। তাদের শেল্টারে ছিল শতাধিক। তিনটি ধাপে এরা কাজ করে। আগের রাতের সমঝোতার বিষয়টিও এরা মেনে নিতে পারেনি। তদন্তে প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যগ্রহণকালে এমন অনেক তথ্য উঠে আসে। সাক্ষ্য প্রদানকারীদের কাছ থেকে এমন অনেক গুরুত্বপূূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এমনকি ওই দিন সংখ্যালঘু ৯টি পরিবারের ওপর হামলা, ঘরবাড়ি লুট, মন্দির ভাংচুর করাও ছিল ওই গ্রপের পরিকল্পনামাফিক। এরা আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরির জন্য গোপন প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এমনকি দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ করার কাজেও ওই নির্দিষ্ট গ্রুপ জড়িত ছিল।

0 Comments:
Post a Comment