৩০ জেলার ৪ কোটি মানুষ লাভবান হবে
মতিন আবদুল্লাহঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের (উড়াল সড়ক) নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে আগামী বছরের জানুয়ারিতে। আর শেষ হওয়ার টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে। এটি বাস্তবায়িত হলে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ২৫টি জেলা এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৫টি জেলার মানুষ খুব সহজে ও দ্রুততার সঙ্গে ঢাকায় প্রবেশ করতে পারবে। নিরসন হবে এই অঞ্চলের বিভিন্ন সড়কের যানজট। সব মিলিয়ে প্রায় চার কোটি মানুষ এ প্রকল্প বাস্তবায়নে লাভবান হবেন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে নির্মিতব্য ২৪ কিলোমিটারর এলিভেটেডে এক্সপ্রেসওয়ের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ঠিকাদার ও সহ-ঠিকাদার নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান চায়না এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ সমঝোতা হলেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডিতে উঠে এসেছে, এ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সাভার, আশুলিয়া, নবীনগর ও সাভার ইপিজেড এলাকার যানজট নিরসন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। একইসঙ্গে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ায় সাভার ইপিজেড সংলগ্ন শিল্পাঞ্চল, ঢাকা চিটাগাং হাইওয়ের সঙ্গে দ্রুতগতিতে চলাচল করা যাবে। উন্নত ও দ্রুতগতির যোগাযোগের কারণে সাভার শিল্পাঞ্চলে নতুন নতুন বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে। এতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে এবং স্থানীয় জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থানের উন্নতি হবে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. শাহাবুদ্দিন খান যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সহ-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এখন চায়না এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ঋণসমঝোতা হলেই প্রকল্পের মূল কার্যক্রম শুরু করা হবে। সবকিছু সম্পন্ন করে আগামী জানুয়ারিতে কাজ শুরু করতে পারব বলে আমরা দৃঢ়ভাবে আশাবাদী।’
জানা যায়, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি সংযুক্ত করবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েকে। বিমানবন্দরের উল্টোদিকের ঢাকা এলিভেটেডের স্টার্টিং পয়েন্ট (কাওলার) থেকে আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। কাওলার থেকে রেললাইনের ওপর দিয়ে আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল-আশুলিয়া হয়ে সাভার ইপিজেডে গিয়ে শেষ হবে এ প্রকল্প। সাভার ইপিজেড থেকে যে কেউ আশুলিয়া এলিভেটেডে উঠে কাওলারে এসে ঢাকা এলিভেটেড হয়ে কুতুবখালী পর্যন্ত চলে যেতে পারবেন। তবে চলাচলকারীরা এর মধ্যে নির্দিষ্ট স্থানের র্যাম্প ব্যবহার করে সাভার, আশুলিয়া, পূবাইল, আবদুল্লাপুর বা ঢাকা এলিভেটেডের (কাওলার-কুতুবখালী) নির্ধারিত র্যাম্প ব্যবহার করে শহরের বিভিন্ন স্থানে ওঠানামা করতে পারবেন।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা ও গাজীপুর জেলার ওপর দিয়ে নির্মিতব্য এই উড়াল সড়ক নির্মাণে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০ হাজার ৯৪৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা ঋণ সহায়তা দিচ্ছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। এ ঋণ সহায়তা দিয়ে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ করা হবে। আর জমি অধিগ্রহণ ও প্রকল্প কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান ৫ হাজার ৯৫১ কোটি ৪১ লাখ টাকা খরচ করবে বাংলাদেশ সরকার।
এই মেগা প্রকল্পকে ফলপ্রসূ করতে সাভারের নবীনগরে দুটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। এ দুটি ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ২ কিলোমিটার। কাওলার থেকে সাভার ইপিজেড পর্যন্ত ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হবে চারলেন বিশিষ্ট। আর আবদুল্লাপুর থেকে বাইপাইল পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার সড়কও চার লেন করা হবে। আর ধউর থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত বিলের মধ্যের সড়ক তুলে ফেলা হবে। সেখানে সড়কের পরিবর্তে ২ দশমিক ৭ কিলোমিটার সেতু নির্মাণ করা হবে। এর আগে সেখানে দুটো ব্রিজ নির্মাণ করা হবে (চারলেনের)। তারপর সেখানকার সড়ক কেটে জলাশয়ের সঙ্গে মিলিয়ে দেয়া হবে। ওই জলাশয়কে ঘিরে সরকারের বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। আর আশুলিয়া ব্রিজ থেকে বাইপাইল পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার নর্দমা তৈরি করা হবে। ওই নর্দমা দিয়ে শিল্প অধ্যুষিত ওই এলাকায় পানি ও পয়ঃবর্জ্য নিষ্কাশন হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জি টু জি পদ্ধতিতে চায়না সরকারের কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে বাংলাদেশ। ঋণের শর্ত হিসেবে চায়না মেশিনারিজ কর্পোরেশনকে এ কাজের ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয় ২০১৭ সালের মার্চে। আর পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোফাইল) অনুমোদন হয় ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে। ইতিমধ্যে ২ বছর অতিবাহিত হলেও ঋণ না পাওয়ায় কাজ প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হয়নি। এ কারণে ঋণ পাওয়ার পর থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নের মূল সময়সীমা নির্ধারণ করা হবে। যদিও জমি অধিগ্রহণ বাবদ ইতিমধ্যে ঢাকা জেলা প্রশাসককে ২৩০ কোটি টাকা এবং গাজীপুর জেলা প্রশাসককে ৭০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এ উড়াল সড়ক থেকে টোল আদায় করে সর্বমোট ২০ (৫ বছর নির্মাণ কাজ ও পরবর্তী ১৫ বছরে) বছরে ঋণ পরিশোধ করবে বাংলাদেশ। প্রথমে ২ ভাগ সুদে ঋণের কথা হলেও পরবর্তীতে চায়না এক্সিম ব্যাংক ৩ ভাগ সুদ দাবি করে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে দু’দেশের সরকারপ্রধান পর্যায়ে আলোচনার প্রেক্ষিতে এখন ২ ভাগ সুদে ঋণ দেয়ার আলোচনা চলছে।
আরও জানা যায়, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ সামগ্রী রাখতে ২৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষে বাইপাইল ও আশুলিয়ার ওই জায়গায় বিনোদন পার্ক বা খেলার মাঠ নির্মাণ করা হবে।

0 Comments:
Post a Comment