হবিগঞ্জ হাসপাতালে নেই গাইনি ডাক্তার
সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন, হবিগঞ্জহবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতাল ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে কয়েক বছর আগেই। কিন্তু সে তুলনায় বাড়েনি বেডের সংখ্যা। প্রায় ২১ লাখ জনসংখ্যার এ জেলার অধিবাসীদের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থলটিতে ডাক্তার নেই ৫০ শয্যা হাসপাতালেরও। আর কাগজে কলমে ১৮ চিকিৎসক থাকলেও ৪ জন প্রেষণে অন্যত্র কাজ করছেন। শুধু বেতন-ভাতাদি তুলছেন এখানে। মাত্র ১৪ জন চিকিৎসক প্রতিদিন সেবা দিচ্ছেন অন্তত ৫ শতাধিক রোগীর। মেডিসিন, গাইনি, কার্ডিওলজি, সার্জারি বিভাগগুলোর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে কোনো চিকিৎসক নেই। আর এ হাসপাতালে জরুরি প্রসূতি সেবা কেন্দ্র চালু থাকলেও নেই কোনো গাইনি ডাক্তার। এ অবস্থায় অনেকটা খুড়িয়েই চলছে হাসপাতালটি। তবে আশার কথা হলো এতো সংকটের পরও জরুরি প্রসূতি সেবায় অবদানের জন্য জাতীয় পুরস্কারে মনোনীত হয়েছে এ হাসপাতালটি।
এ বিষয়ে হাসপাতালের শিশু চিকিৎসক ডা. মো. কায়সার রহমান জানান, প্রতিদিন হাসপাতালটিতে গড়ে ৩/৪শ’ জন রোগী ভর্তি থাকেন। আর চিকিৎসা নেন আরও অন্তত ৩ থেকে ৪শ’ জন। একেকজন ডাক্তারকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয়। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রথীন্দ্র চন্দ্র দেব জানান, এ হাসপাতালে ডাক্তার না থাকায় অধিকাংশ সময়ই রোগীদের ঢাকা বা সিলেটে প্রেরণ করা হয়। যারা আছেন তাদের একেকজন ডাক্তার ১০/১২ ঘণ্টা পর্যন্ত দৈনিক ডিউটি করেন। তিনি বলেন, ২৫০ শয্যার হাসপাতালের জনবলের চাহিদা চেয়ে পত্র দিয়েছি প্রায় ৮ মাস পূর্বে। এরপর একাধিকবার পত্র দিয়েছি। কিন্তু এখনও তা অনুমোদন হয়নি। এমন দুরবস্থার মাঝেও জরুরি প্রসূতি সেবায় অবদানের জন্য এ হাসপাতালটি জাতীয় পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে। শুধু ডাক্তার সংকট নয়, আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি একেবারেই অকেজো হয়ে গেছে। এক্স-রে মেশিনটিও অতি পুরনো। এগুলো নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ৭৬ জন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগের জন্য চাহিদা দেয়া হয়েছে। এটিও এখনও অনুমোদন হয়নি।
হাসপাতালের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, হাসপাতালটিতে মোট ৪০ ডাক্তারের পদ আছে। এর বিপরীতে কাগজে-কলমে ১৮ জন কর্মরত আছেন। আর বাস্তবে আছেন মাত্র ১৪ জন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে ডাক্তারের প্রকট সংকট। একজন ডাক্তারকেই একাধারে সার্জারি, ওয়ার্ডে ডিউটি এবং আউটডোরে রোগী দেখতে হয়। অথচ সার্জারি করার পর একজন ডাক্তারের মানসিক প্রশান্তির জন্য কিছু সময় রেস্ট নিতে হয়। এখানে ইওসি (জরুরি প্রসূতি সেবা কেন্দ্র) চালু আছে। এখানে ২৪ ঘণ্টা প্রসূতি সেবা দেয়া হয়। কিন্তু কোনো গাইনি ডাক্তার নেই। কিন্তু প্রতিদিনই অসংখ্য প্রসূতি রোগীকে সেবা দিতে হয়। অনেকগুলো ডেলিভারি রোগী থাকে। সিজারও করতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব দেয়ার জন্য বাইরে থেকে ডাক্তার নিয়ে আসতে হয়। অথবা অন্যান্য বিভাগের ডাক্তারদের এ সেবাগুলো দিতে হয়। এ অবস্থায় সেবাদানে ডাক্তারদের বেশ বেগ পেতে হয়। আর ডাক্তার না থাকার কারণে একটু গুরুতর হলেই ঢাকা বা সিলেটে প্রেরণ করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় অন্তত জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসারসহ জরুরি কয়েকটি পদ পূরণ করা গেলে সেবা কার্যক্রমে গতি আনা সম্ভব বলে মনে করেন তারা।

0 Comments:
Post a Comment