সংবাদ সম্মেলন সড়কে আইন প্রয়োগ না করে সুবিধা নিলে ব্যবস্থা
যুগান্তর রিপোর্টসড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশ স্বচ্ছ থাকবে। পুলিশ সদস্যদের বলে দেয়া হয়েছে, ট্রাফিকের লোকজন যদি আইন অমান্য করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেনো কর্মকর্তা যদি মামলা না দিয়ে অন্য কোনোভাবে সুবিধা নিতে চায়, কেউ যদি অভিযোগ করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইন প্রয়োগের সঙ্গে সম্পৃক্ত সার্জেন্টদের ক্যামেরা দেয়া হবে। ক্যামেরা যদি বন্ধ থাকে, তবে ধরে নেয়া হবে তিনি অবৈধ কাজের জন্য তা বন্ধ রেখেছিলেন। এক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। সোমবার বেলা ১১টার দিকে ডিএমডি মিডিয়া সেন্টারে সড়ক আইন-২০১৮ এর প্রয়োগবিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার এ কথা বলেন।
ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, ১ নভেম্বর গেজেট পাসের মাধ্যমে আইন বাস্তবায়ন করা হলেও প্রয়োগ নিয়ে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। নতুন ধারা সম্পর্কে ডিএমপির ৮০০ কর্মকর্তাকে এরই মধ্যে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি আইন সম্পর্কে নতুন একটি বই বাজারে এসেছে। সব কর্মকর্তাকে এক মাসের মধ্যে নতুন আইন সম্পর্কে বিস্তারিত জানার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আইনের কোনো ধারায় যদি কাউকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হয়, তাহলে সে বিষয়ে শুনানির ব্যবস্থা রয়েছে। আইন প্রয়োগের আগে পুলিশের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আইনটি প্রয়োগের আগে যানবাহন ব্যবহারকারীদের সচেতন করা হচ্ছে। বাসটার্মিনাল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মাইক দিয়ে আইনের বিষয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে। শ্রমিকদের জড়ো করে আইন সম্পর্কে ধারণা দেয়া হচ্ছে। জাতীয় পত্রপত্রিকায়ও নতুন আইনের ধারা নিয়ে ফিচার দেয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন আইনের ধারাগুলোয় সর্বনিম্ন টাকার পরিমাণ লেখা না থাকলেও সর্বোচ্চ শাস্তির পরিমাণ রয়েছে। সেক্ষেত্রে আইন অমান্য করলে পুলিশ কীভাবে মামলা দেবে? এই প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, সামান্য জরিমানা দিয়েই সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর বাস্তবায়ন শুরু হবে। নতুন আইন কেউ প্রথমবার ভঙ্গ করলে তাকে সামান্য জরিমানা করা হবে। একই সঙ্গে তাকে একটি লিফলেট দেয়া হবে। পরবর্তী সময়ে কেউ একই অপরাধ করলে তাকে আইন অনুযায়ী পুরো জরিমানা বা শাস্তি ভোগ করতে হবে। প্রথম এক সপ্তাহ নতুন আইনে কোনো মামলা হবে না। এরপর থেকে রসিদের মাধ্যমে মামলা নেয়া শুরু হবে। আগে ডিএমপিতে পস মেশিনের (পয়েন্ট অব সেল) মাধ্যমে মামলা দেয়া হতো। তবে সফটওয়্যার আপডেটের কারণে মেশিনে মামলা দেয়া আপাতত বন্ধ আছে। আগের নিয়মে কাগজের কেস স্লিপ বই প্রিন্ট করা হয়েছে। সেটা দিয়ে আপাতত মামলা দেয়া হবে। পস মেশিনের সার্ভার আপডেট করার পরে এ পদ্ধতিতে মামলা নেয়া শুরু হবে।
মামলার ধারাগুলো নিয়ে তিনি বলেন, এ মামলায় নতুন কিছু বৈচিত্র্য আছে। এই আইনে সাজার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হয়েছে। এতে মানুষের মধ্যে ভয়ের হলেও আইন মানার প্রবণতা তৈরি হবে। উন্নত বিশ্বের মতো আইন ভঙ্গের জন্য পয়েন্ট কাটার পদ্ধতি রাখা হয়েছে।
অনেক সময় মামলার কাগজ তোলা নিয়ে নাগরিকদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এই ভোগান্তি রোধে কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে কিনা- জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম বলেন, মামলা দেয়া হলে সংশ্লিষ্ট ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ে তার দায়িত্বে কাগজ দেয়া হয়। অন্য কোথাও কাগজ দেয়া হয় না। তার কাছে গেলেই ভোগান্তি ছাড়া গাড়ির কাগজপত্র পাওয়া যাবে।
জেব্রাক্রসিং বা ফুটওভারব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার না হলে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে নতুন আইনে। এই পরিমাণটি আগে ছিল ২০০ টাকা। অথচ রাজধানীর অনেক সড়কে ওভারব্রিজ বা জেব্রাক্রসিং নেই। এক্ষেত্রে পথচারীদের বিরুদ্ধে কীভাবে মামলা দেয়া হবে- জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, যেখানে জেব্রাক্রসিং নেই, সেখানে ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা তাদের (পথচারী) রাস্তা পারাপারে সাহায্য করবেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন, অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস.) কৃষ্ণপদ রায়, অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ প্রমুখ।

0 Comments:
Post a Comment